ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জামিনে বেরিয়ে আসাদের দেখে উৎসাহিত হচ্ছে নতুন ইয়াবা কারবারীরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
এখনো অক্ষত রয়েছে কক্সবাজার জেলাব্যাপী শক্তিশালী ইয়াবা সিন্ডিকেট। আত্মসমর্পনকারী ইয়াবা কারবারিদের অধিকাংশ জামিনে ছাড়া পাওয়ায় আরো সক্রিয় হয়েছে এই সিন্ডিকেট। এখন সমুদ্র পথেই পাচার হচ্ছে ইয়াবার বড় চালান। মাত্র ৭-১১ মাস কারাবাস করে জামিনে মুক্তি পেয়েছে অন্তত ৪০ জন।

আত্মসমর্পনকারী ইয়াবা কারবারিদের অধিকাংশ জামিনে মুক্ত হওয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে পুরনো শক্তিশালী ইয়াবা সিন্ডিকেট। এছাড়া পলাতক ইয়াবা ব্যবসায়িরা এলাকায় ফিরে আসায় তাদের দেখে অনেকে নতুন করে ইয়াবা ব্যবসায় জড়াচ্ছে তাই এ অবস্থার সৃস্টি হয়েছে এমনটি মনে করছেন বিভিন্ন পেশার লোকজন।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি টেকনাফ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণের সময় তারা তিন লাখ পিস ইয়াবা এবং ৩০টি আগ্নেয়াস্ত্র তুলে দেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। তাদের প্রত্যেককে অস্ত্র এবং মাদক আইনের দুইটি মামলায় আসামি করা হয়। ২০ জানুয়ারি দুই মামলায় তাদের সবার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয় আদালতে। তৎমধ্যে একজন আসামী আটক অবস্থায় মারা যায়।

জানা যায় ২০২০ সালে সেপ্টেম্বর মাসে মাত্র ৭ কারাগারে থেকে জামিনে মুক্তি পায় ৫ জন। একই বছর ৯ মাস কারাবাস করে জামিনে মুক্তি পায় ১৫ জন।

ধারাবাহিকভাবে ইতোমধ্যে অন্তত ৪০ জন আসামী জামিনে মুক্তি পেয়েছে। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ি আব্দুস শুক্কুর, শফিকুল ইসলাম, ফয়সল ইসলাম, আবদুল আমিন, সহ অনেক শীর্ষ ইযাবা কারবারী রয়েছে। পুলিশের ষাড়াশি অভিযানে কোনঠাসা হয়ে এসব তালিকাভুক্ত কারবারিরা আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়।

টেকনাফ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর দাবি করেন, এখনো যারা কারাগারে আছে তাদের জামিনের জোর তদবির চলছে। ইয়াবা সিন্ডিকেটের যারা কারাগারের বাইরে ছিল তারা একজোট হয়ে সবাইকে জামিনে মুক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এরা কারাগারে থাকলেও তাদের ইয়াবা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এখন তারা বাইরে আসায় ইয়াবা ব্যবসা আরো বেড়ে গেছে। আবার খুব অল্প সময়ে এবং কম শাস্তিভোগ করে জামিনে আসায় এলাকান নতুন করে সবার ইয়াবা ব্যবসায় জড়াচ্ছে। কারন সবাই মনে করছে ইয়াবা ব্যবসা করলেও শাস্তি তেমন হয়না।

কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন জানিয়েছেন, আদালত থেকে জামিন পেলে প্রশাসনের করার কিছু নেই। তবে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন হতাশাব্যঞ্জক হওয়ায় আসামিরা সহজেই ছাড়া পায়। কোন তদন্ত না করে কিংবা দায়সারা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়েছে এমন অসংখ্য মামলা আছে। তদন্ত যথাযথ ভাবে করা হলে এভাবে ছাড়া পেতো না ইয়াবা ব্যবসায়িরা।

এদিকে ইয়ারা ব্যবসায়ীরা জমিন পাওয়ায় কক্সবাজার জেলা পুলিশকেও সতর্ক করে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে সংশ্লিস্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে। তারা যাতে নতুন করে ইয়াবা ব্যবসায় জড়াতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে বলা হয় ওই সতর্ক বার্তায়। এদিকে স্থানীয়দের দাবী কয়েক বছর আগে প্রশাসনের তৎপরতায় এলাকা ছাড়া বেশির ভাগ ইয়াবা ব্যবসায়ি এখন এলাকায় ফিরেছে। তার উপরে আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা ব্যবসায়িরা জামিনে বেরিয়ে আসায় এলাকায় নতুন করে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরছে ইয়াবা ব্যবসায়।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান বলেন, আত্মসমর্পণ করে আইনগত সুবিধা নিয়ে জামিন পেয়ে মাদক ব্যবসায় জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তিনি বলেন, যে কারোর জামিন পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আদালত জামিন দিলে আমাদের কিছু করার থাকেনা। তাদের তো কোনো শাস্তি হয়নি। তবে মামলা চলমান থাকবে।

পাঠকের মতামত: